অগ্রযাত্রা সংবাদঃ তুচ্ছ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ৪ মার্চ রাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ছুরিকাঘাতে সিএনজি অটো চালক মুক্তিযোদ্ধা সন্তান জলিল মিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার ৫ মার্চ রাতেই কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া শফি ও তার দুই ভাইসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামী দেখানো হয়েছে। নিহতের বড় ভাই খলিল মিয়া বাদি হয়ে এ মামলা করেন। নিহত অটোচালক জলিল মিয়া আলীনগর বস্তি এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মিয়া ওরফে লাল মিয়ার ছেলে।
প্রকাশ্যে মানুষজনের সামনে নির্মমভাবে ছুিরকাঘাত করে সিএনজি অটো চালককে খুন করার ঘটনায় ৬ মার্চ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া সরেজমিন ঘটনাস্থল শমশেরনগর সিএনজি ফিলিং স্টেশন এলাকা পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া নিহতের বাড়িতে গিয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবার সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতকরণে পুলিশি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার জাকারিয়া বলেন, কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। আসামী যতবড় প্রভাবশালী হউক না কেন পুলিশ থাকে গ্রেফতার করবে। সাধারন মানুষে উদ্যেশ্যে স্বজনদের আশ^াস প্রদান করে বলেন, দ্রুত সময়ে আসামীদের গ্রেফতার করা হবে। এ সময় তিনি কমলগঞ্জ থানার ওসিকে ২ দিনের ভিতরে আসামীকে থানা হাজতে দেখতে চান বলেও নির্দেশ দেন। এ সময় পুলিশ সুপার তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা নিহত পরিবার সদস্যদের হাতে তুলে দেন।
মামলার তদন্তকারী অফিসার কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক ফজলে এলাহী বলেন, এ ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মানুষজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবার সদস্যদের শান্তনা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে সিএননজি ফিলিং স্টেশনে আগে গ্যাস ফিলিং করতে কারের লাইনে চলে যায় সিএনজি অটো চালক জলিল মিয়া। এ নিয়ে গ্যাস ভরতে আসা কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা গোলাম কিবরিয়া শফি ও তার চালক হামিদ মিয়ার সাথে সিএনজি অটো চালক জলিলের তর্কবিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মাঝে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় কার মালিক ফোন করে ছোট ভাইসহ একদল যুবককে ডেকে আনেন। আগত যুবকরা এসইে সিএনজি অটো চালক জলিলকে উপর্যুপরিভাবে ছুরিকাঘাত করে। এসময় ভাইকে বাঁচাতে আসা কাশেম মিয়াকেও মারধর করা হয়। ঘটনার পর এলাকাবাসী গুরুতর আহতাবস্থায় অটো চালক জলিল মিয়াকে উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। তার অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় দ্রুত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে মরদেহ আলীনগর গ্রামে পৌছলে রাত সাড়ে ৮টায় দুই সহস্রাধিক মুসল্লীর উপস্থিতিতে নামাজে জানাজা সম্পন্ন করে জলিল মিয়ার লাশ দাফন করা হয়।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, শুক্রবার রাতে নিহত সিএনজি অটো চালক জলিল মিয়ার বড় ভাই খলিল মিয়া বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া শফিকে। তার সাথে পর্যায়ক্রমে রয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া শফির ছোট ভাই জেলা যুবদলের নেতা গোলাম রব্বানী তৈমুর, তার ভাই কমলগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর গোলাম মুগ্নি মুহিত, সাইফুর রহমান ও আলম হোসেন। এছাড়া আরও ৫/৬ জন অজ্ঞাতনামা আসামী রয়েছে।
Leave a Reply