ডেস্ক রিপোর্ট: দেড় বছর পর খুলতে যাচ্ছে স্কুল-কলেজ। আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হচ্ছে। শুরুতে এ বছর ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হবে। আর বাকিদের সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে। মাস্ক ছাড়া কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারবে না। গতকাল রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সভায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরবর্তীতে ভিসিদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনার সংক্রমণ দ্রুত কমছে। জুলাই মাসের তুলনায় সংক্রমণ ৭০ শতাংশ কমেছে। গত বছরের অভিজ্ঞতা বলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমাদের সংক্রমণের হার অনেক কমে গিয়েছিল। পাশাপাশি আমাদের টিকাদান কার্যক্রম যেভাবে বিপুল গতিতে চলছে এবং টিকার প্রাপ্তি সরকার নিশ্চিত করেছে তার সমস্ত কিছুর বিবেচনায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান শুরু হবে। সংক্রমণ বাড়লে ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথাও বলেন শিক্ষামন্ত্রী। ডা. দীপু মনি বলেন, শুরুর দিকে এবারের ও পরের বছরের যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাদের প্রতিদিন স্কুলে আসতে হবে। এছাড়াও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে আসবে। প্রথমদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে এই ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। যে প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন আছে আশা করছি ৯ তারিখের মধ্যেই তা সম্পন্ন হয়ে যাবে। মাঠ পর্যায়ের পাঠদান শুরু করার সম্পূর্ণ তৈরি আছে তা নিশ্চিত করবেন। মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী সবার মানতে হবে। অভিভাবকদের একটা বিরাট বড় সম্পৃক্ততা রয়েছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আমরা আশা করছি ব্যাপক প্রচারণা চালাবো। অভিভাবকরা নিশ্চিত করবেন যে, তাদের বাড়িতে কেউ আক্রান্ত নেই। তার সন্তানের এই রোগের কোনো উপসর্গ নেই। তার সন্তানের মাধ্যমে যেনো অন্য কোনো শিক্ষার্থী সংক্রমিত না হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপা, অন্যান্য উপসর্গ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। মাস্ক পরিধান করা ছাড়া কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকবে না। মাস্ক অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকলের পরতে হবে। প্রাইমারি পর্যায়ে একেবারে ছোট যারা তাদের কোনো অসুবিধায় খেয়াল রাখবে শিক্ষকরা। এছাড়াও তিনি বলেন, র্যান্ডম স্যাম্পলিং করে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, স্কুলে প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করাতে হবে। স্কুলে আপাতত কোনো এসেম্বিলি হবে না। তবে ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বা খেলাধুলা চলবে, যাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকতে পারে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে চেকলিস্ট পূরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। র্যান্ডম স্যাম্পলিং করে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলাকালে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সে সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। অভিভাবকরা যখন তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাবেন তখন তার পরিবারের কেউ কিংবা শিক্ষার্থীর করোনার উপসর্গ নেই তা নিশ্চিত করবেন। তার সন্তানের মাধ্যমে যেন অন্য কোনো শিক্ষার্থীর সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মুখে মাস্ক পরিয়ে ক্লাসে পাঠাবেন। চলতি বছরের এসএসসি- এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, যেহেতু তাদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে সেহেতু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা হবে না। তাদের অ্যাসাইমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের সঙ্গে কথা হয়েছিল যে সকল শিক্ষার্থীর এক ডোজ টিকা নেয়ার পর, দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে খুলে দেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে মধ্য অক্টোবর ঠিক করা হয়েছিল। এখন যে পরিস্থিতি তাতে আমি আবারো এই সপ্তাহে সকল মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরদের সঙ্গে বৈঠক করবো।
জেএসসি-জেডিসি-পিইসি পরীক্ষা অনুষ্ঠান সম্পর্কে দীপু মনি বলেন, জেএসসি-জেডিসি-পিইসি পরীক্ষাগুলো নেয়ার সার্বিক প্রস্তুতি আমাদের থাকবে। অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যদি আমরা মনে করি পরীক্ষাগুলো নেয়া সম্ভব তাহলে পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে বলে জানান তিনি। টিকা কার্যক্রমের অগ্রগতিও তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিকা পায়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১৮-এর বেশি বয়সীদের টিকা দেয়া যখন শুরু হয়, তার মধ্যে যাদের এনআইডি আছে তাদের নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে। তারা কী পাবলিক, প্রাইভেট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি সাত কলেজের সেটা দেখা হয়নি। কাজেই যে কোনো শিক্ষার্থীর বয়স যদি ১৮ বছরের ওপরে হয়, তার এনআইডি থাকলে এখনি তিনি নিবন্ধন করতে পারেন। এখন তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা নিতে পারেন। যার এনআইডি নেই তার জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
স্কুল-কলেজ খোলার গাইড লাইন: স্কুল-কলেজ খোলার গাইড লাইন প্রকাশ করেছে মাউশি। গতকাল রোববার অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়। আগামী ৯ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে সব স্কুল-কলেজকে নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। নির্দেশনাগুলো হলো- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ মুখসহ অন্যান্য স্থানে কোভিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়গুলো ব্যানার বা অন্য কোনো উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে সব শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের সবগুলো প্রবেশমুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা। যদি কেবল একটি প্রবেশমুখ থাকে সেক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশমুখের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথমদিন শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে সে বিষয়ে শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী ব্রিফিং দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের দেয়া ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ এবং আঙিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব ওয়াশ রুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং অভিভাবক প্রবেশের সময় সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর সঠিকভাবে মাস্ক (সম্ভব হলে কাপড়ের মাস্ক) পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার এমন ব্যবস্থা করা যাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢোকার আগে সবাই সাবান দিয়ে হাত ধুতে পারে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পারস্পারিক তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কোথাও পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরুপণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত মেরামত, বৈদ্যুতিক মেরামত এবং পানির সংযোগজনিত মেরামত সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
Leave a Reply