(মাদারীপুর) প্রতিনিধি: মাদারীপুর জেলার শিবচরে বগুড়ার রেজাউল করিম হত্যার ঘটনায় ১ মাস ২৬ দিন পর হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে এমদাদুল মুন্সী(২৩) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে শিবচর থানা পুলিশ। এমদাদুলের দেখানো তথ্যমতে ঘটনাস্থল থেকে নিহত রেজাউলের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত ১০ সেপ্টেম্বর রেজাউলকে চাকরি দেয়ার কথা বলে বগুড়া থেকে এনে ঘাতক বন্ধু রোলাস মালিথা রনি এমদাদের সহায়তায় হত্যা করে। গত ২০ সেপ্টেম্বর শিবচরের মাদবরচরের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে রেজাউল করিমের মুখ পুড়ানো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে লাশ উদ্ধার হলেও পরে পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত এমদাদুলের দেয়া তথ্য মতে
শিবচর থানা পুলিশ জানায়,বগুড়ার সদর উপজেলার চকসূত্রাপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. রেজাউল করিম (৪০) ও কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার চর আমলা গ্রামের সরোয়ার হোসেনের ছেলে রোলাস মালিথা রনি(৪০) কর্মসূত্রে কয়েক বছর আগে নেপাল থাকতো। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। আড়াই বছর আগে দেশে আসার পরও তাদের যোগাযোগ ছিল। ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে রেজাউলকে পদ্মা সেতুর প্রকল্পে কাজ দেয়ার কথা বলে রনি শিবচরের মাদবরচরে তার শ্বশুর বাড়িতে আসতে বলে। গত ১০ সেপ্টেম্বর রেজাউল ৩ হাজার টাকা নিয়ে শিবচরের মাদবরচর আসে। রনি তার সহযোগী এমদাদ মুন্সীকে(২৩) প্রকল্পের কর্মকর্তা সাজিয়ে রেজাউলকে নিয়ে রাতে শিবচরের মাদবরচরের কালাই হাজীকান্দি একটি নির্জন এলাকার পরিত্যক্ত ঘরের কাছে নিয়ে যায়। রাত গভীর হলে মোবাইলে কথা বলার অভিনয় করে সরে গিয়ে রেজাউলকে পেছন থেকে গলায় ফাঁস দেয়। রেজাউল বাঁচার জন্য ছুটতে চাইলে ২ জনে মিলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এরপর এমদাদের গোংরানোর কন্ঠ নকল করে রেজাউলের ছবি তুলে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ২ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারটি টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। পরে পরিচয় গোপন করতে মরদেহটির মুখ পুড়িয়ে পালিয়ে যায় দুই ঘাতক। গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কালাই হাজী কান্দি গ্রামের টিনসেডের ওই পরিত্যক্ত ঘর থেকে দূর্গন্ধ পেয়ে শিবচর থানা পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে শিবচর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হাত পা বাঁধা ও মুখমন্ডল দাহ্য জাতীয় পদার্থ দিয়ে ঝলসানো অবস্থায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে রেজাউলের লাশটি উদ্ধার করে।
পরে শিবচর থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটনে নামে। শিবচর থানার উপ-পরিদর্শক সঞ্জীব জোয়াদ্দারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সোমবার(১৫ নভেম্বর) ঢাকার কেরানীগঞ্জের কবুতরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমদাদুল হক মুন্সিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত এমদাদুল পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত এমদুদুলকে মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুর আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় খুনের রহস্য উদঘাটন করি এবং খুনের সাথে জড়িত এমদাদুলকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করি। এমদাদুলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘটনাস্থলের পাশের একটি পাটক্ষেত থেকে নিহত রেজাউলের ব্যাগ ও জামাকাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। রেজাউল করিম হত্যাকান্ডের সাথে গ্রেফতাকৃত এমদাদুল সরাসরি জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেছে। অপর আসামী রোলাস মালিথা রনিকে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
Leave a Reply