সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অসময়ে পানি চাপ ও বৃষ্টির কারণে দিরাইয়ে একাধিক হাওররক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক বাঁধের মাটি দেবে গেছে। নদীতে প্রতিদিন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ১১টি হাওরের ২৮ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমির বোরো ফসল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এতে করে ৪০ হাজার কৃষক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
গত একদিনের ব্যবধানে কালনী ও ধারাইন নদীর পানি বেড়েছে ৬-৭ ইঞ্চি। সুরমা নদীর পানি প্রায় ৪ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের বরাম হাওরের তোফানখালী বাঁধটিতে বড় ফাটল দেখা গিয়েছে। বর্তমানে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এই বাঁধটি। পিআইসি নং ৮৫ ও ৮৬ আওতায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারটি হাওর অংশে ফাটল ধরেছে ও গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বরাম হাওর উপ-প্রকল্প ৮৯নং পিআইসির বাঁধে ফাটল দেখা দিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। অপরদিকে, সামান্য বৃষ্টিতে উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওর উপ প্রকল্পের ২৮নং বাঁধের ক্লোজার পয়েন্টের বস্তা ধসে পড়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়- প্রতিটি হাওররক্ষা বাঁধে মাটি ভরাট, দুর্মুজ, ড্রেসিং, ঘাস লাগানো বাধ্যতামূলক থাকলেও সংশ্লিষ্ট পিআইসি তা না করে অনিয়ম করছেন। ফলে হাওররক্ষার বাঁধগুলো দুর্বল হচ্ছে।
হাওরপাড়ের কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, সময়মতো কাজ সমাপ্ত না করে এখন জরুরি মেইটেইনসের নামে সরকারের লাখ লাখ টাকা লুটপাট করার ফন্দি করছে পাউবো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ০.০৩৫ কি.মি. অংশের বাঁধের অর্ধেক জায়গায় মাঝারি ধরনের ফাটল দিয়েছে। বাঁধ থেকে সরাসরি নিচের দিকে মাটি দেবে গিয়েছে। যার ফলে নদী অংশে সামান্য পানি বৃদ্ধি পেলেই এই বাঁধটি আরো বেশি ঝুঁকিতে পরবে। বিগত ২০১৭ সালের অকাল বন্যায় প্রথমেই এই ক্লোজারটি ভেঙে তলিয়ে যায় বরাম হাওর।
অকাল বন্যার পানি থেকে তোফানখালী ক্লোজারে দুইটি পিআইসি দেয়া হয়। পিআইসি নং ৮৫-তে চলতি বছরের বাঁধের ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ও এর পার্শ্ববর্তী পিআইসি ৮৬-তে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, বাঁধের পাশে বেশ শ্রমিক পাওয়া যায় যারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে বাঁধে কাজ করছে।
বাঁধে অবস্থানরত পাউবো দিরাইয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এটিএম মোনায়েম হোসেন বলেন, পানি আরও বাড়বে, দুই থেকে আড়াই মিটার পানি বাড়লে অনেক বাঁধ ঝুঁকিতে পড়বে, ওভার-ফ্লো হলে কিছু করার থাকবে না। আমরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে যা যা করার তাই করা হচ্ছে। তুফানকালি বাঁধে ফাইলিং করে বাঁশ দেয়া হচ্ছে। দিরাই উপজেলার ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজার রয়েছে। তুফানখালী বাঁধে ফাটল ধরেছে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করি। উনাদের নির্দেশে বাঁধে বেম্বো পাইলিং, বোল্লা পাইলিং করা হচ্ছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় যা যা করার আমরা করব।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, সার্বক্ষণিক আমরা বাঁধ এলাকায় আছি। যে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে সে বাঁধেই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিব। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি আরও বাড়তে পারে, আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত দু-তিন দিনে চেরাপুঞ্জি ও আসামে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পাউবো, পিআইসির লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রনিধিদের নিয়ে পর্যাপ্ত বস্তাসহ বাঁধে বাঁধে অবস্থান নেবার জন্য। তিনি জানান, সপ্তাহখানেকের মধ্যে হাওরে ধানা কাটা শুরু হবে।
Leave a Reply