সিলেট প্রতিনিধি ঃ
বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এটি চলতি মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যা। একের পর এক বন্যায় বিপর্যস্ত এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। বন্যায় তলিয়ে গেছে এই দুই জেলার কয়েকটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র। পানিতে তলিয়ে গেছে সঞ্চালন লাইনও। এতে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বহু এলাকা।সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দুই জেলার প্রায় ৩ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন।
জানা গেছে, সিলেটের কুমারগাঁওয়ের বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড লাইনের উপকেন্দ্রেও পানি উঠে গেছে। পানি আরেকটু বাড়লে এই কেন্দ্রও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
তবে শুক্রবার দুপুর থেকে সেনাবাহিনী, বিদ্যুৎ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশন সম্মিলিতভাবে এই উপকেন্দ্র চালু রাখতে কাজ করছে। বালির বস্তা ফেলে উপকেন্দ্রে পানি আটকানোর চেষ্টা চলছে। কেন্দ্রে ঢুকে পড়া পানি সেচ দিয়ে শুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ স্টেশন ডুবে যাওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। পানিতে বিদ্যুতের লাইন ও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলা ও সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার দীলিপ চন্দ্র চৌধুরী জানান, সমিতির সিলেট-১ এর অধীনে থাকা ৪ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জীব কুমার রায় জানান, সিলেট-২ এর অধীনে থাকা ২ লাখ ১২ হাজার গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎহীন অন্তত ৯০ হাজার গ্রাহক।
সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন প্রধান, জেওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হক বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার অবনতি ঘটেছে। তিনি বলেন, জীবন দিয়ে হলেও মানুষের সেবা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। শপথ নিয়েছি তাদের জন্য কাজ করার জন্য। তিনি জানান, সিলেট কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি উঠে বিদ্যুৎ সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি খাদ্য গুদামও হুমকিতে। এগুলো রক্ষায় সেনা সদস্যরা কাজ করছেন।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় তাদের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক আছেন। তার মধ্যে সিলেটের ১ লাখ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ হাজার গ্রাহক এখন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্যামুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। সেনাবাহিনীও কাজ করছে। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশে বাঁধ নির্মাণ করেছেন। ইতোমধ্যে কেন্দ্রে ঢুকে পড়া পানি সিটি করপোরেশনের সাকার মেশিন দিয়ে শুকানো হচ্ছে। এই কেন্দ্র ডুবে গেলে সিলেটজুড়ে চরম বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল কাদির বলেন, পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, কুমারগাঁও উপকেন্দ্র তলিয়ে গেলে দুই জেলার ৯০ শতাংশ সরবরাহই বন্ধ হয়ে পড়বে।
এদিকে ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি জানানো হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী সিলেট অঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ামাত্র পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
Leave a Reply