অগ্রযাত্রা সংবাদঃ সুফীসম্রাট নিজাম উদ্দীন আওলিয়ার (রহঃ) কথা না জানা লােক বাংলা -ভারত-পাকিস্তানে সম্ভবতঃ খুবকমই রহিয়াছে। অস্বীকার করার উপায় নাই যে, একটি আকর্ষণীয় জনশ্রুতি তথা ঘটনার মধ্য দিয়াই উক্ত নামটি এদেশে বেশী পরিচিতি লাভ করিয়াছে। ঘটনাটি সংক্ষিপ্ত আকার এই যে, নিজাম উদ্দীন (রহঃ) ছিলেন দেশের ত্রাস সঞ্চারকার দুর্ধর্ষ ডাকাত। জীবনে তিনি নিরানব্বইটি খুন করিয়াছিলেন। অবশেষে আর একটি পাপ কার্যোদ্যত লােককে পাপকার্যে বাধা দিতে গিয়া আর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটাইয়া জীবনে একশত খুনের সংখ্যা পূর্ণ করেন । আর এই শেষ খুনের ঘটনাই তাহার জীবনের মােড় ঘুরাইয়া দেয় । এই সময় তাহার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, যাহার ফলে তিনি দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ডাকাত হইতে সর্বশ্রেষ্ঠ অলীতে রূপান্তরিত হন। ঘটনাটির সত্য-মিথ্যা বিচার করিতে যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নহে এবং আমরা হযরত নিজাম উদ্দিন (রহঃ) -এর জীবনী আলােচনা ও করিতে যাইতেছি না। তাঁহার পবিত্র জীবনে এইরূপ একটি ঘটনা সত্যই ঘটিয়াছিল কিনা তাহাও আমরা বলিতে পারিতেছি না। কিন্তু ইহা সত্যকথা যে, আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর লােক এই জাতীয় রসাত্নক ও আকর্ষণীয় ঘটনার প্রতি বেশী আগ্রহী এবং এইগুলিকেই খুৰবেশী চর্চা করিয়া থাকে। তাই ঘটনাটি সারাদেশে ছড়াইয়া পড়িয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সকলের কাছে উহার মাধ্যমে সমধিক পরিচিত হইয়াছেন । আমরা এখানে যাহার জীবনী লিখিতে বসিয়াছি তাঁহারই একটি অংশে প্রসঙ্গক্রমে এই মহান অলীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় প্রদান করা প্রয়ােজন হইয়া পড়িয়াছে। হযরত নিজাম উদ্দীন আওলিয়া (রহঃ) ভারতের তৎকালীন বেরার (মধ্য প্রদেশ) --যাহা যুক্ত প্রদেশ নামে পরিচিত ছিল, তথাকার বাদায়ূন নামক স্থানে ৫৩৪ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন । তাঁহার পিতা খাজা দানিয়েল (রহঃ) ও একজন কামেল অলী ছিলেন। শিশুকালেই তিনি পিতৃহারা হন। সুতরাং বিধবা মাতার তত্ত্বাবধানে তিনি লালিত-পালিত হন । মাতা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী,ধার্মিক ও বিদূষী রমণী ছিলেন। পুত্র বাল্য কোরআন এবং হাদীস শাস্ত্রে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করার পর তাঁহাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে মাতা নিজেই পুত্রকে নিয়া দিল্লী চলিয়া আসেন। এখানে আসিয়া নিজাম উদ্দীন (রহঃ) ধর্মীয় এলেমের বিভিন্ন শাখায় উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করেন। তাঁহার শিক্ষাগত যােগ্যতার ফলে অচিরেই তিনি দিল্লীর শাসনকর্তৃপক্ষের দৃষিট আকর্ষণ করেন এবং শহরের সর্বপ্রধান কাজীর পদপ্রাপ্ত হন। কিছুদিন পর এই পদে বহাল থাকা অবস্থায় একবার তিনি দিল্লীর খ্যাতনামা অলী হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীর (রহঃ) মাযার শরীফ যিয়ারতে গমন করেন ।পথে এক দরবেশের সাথে তাহার সাক্ষাত ঘটে। দরবেশ ছিলেন দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি হযরত নিজাম উদ্দীন আওলিয়া (রহঃ)-কে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, ওহে নিজাম উদ্দীন! তুমি যে উদ্দেশ্যে দুনিয়ায় আসিয়াছ, তাহা তাে তােমার বর্তমান পথে সাধিত হইবে না, তুমি যে পার্থিব উদ্দেশ্য সাধনে ব্যাপৃত হইয়া পড়িয়াছ । আল্লাহ্ তােমাকে পাঠাইয়াছেন দ্বীনের কাজের জন্য। তুমি বর্তমান পথ পরিত্যাগ কর। খথা কয়টি বলিয়াই দরবেশ অন্তর্হিত হইলেন ৷
চলমান......
বাকি পর্ব পড়তে অগ্রযাত্রা সংবাদে চোখ রাখুন।