অগ্রযাত্রা সংবাদ :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গত ১৮ মে উদনার ছড়া ব্রিজের নিচে একটি সাদা রংয়ের প্লাস্টিকের বস্তার ভিতর পা বাধা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ।
বুধবার (১৯ মে) দুপুর ১ টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয় হলরুমে মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যার মূল ঘটনা তোলে ধরেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ),হাসান মোহাম্মদ নাছের রিকাবদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর), এ,বি,এম, মোজাহিদুল ইসলাম (পিপিএম),সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আশরাফুজ্জামান,শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুছ ছালেক প্রমুখ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি হুবহু তোলে দেয়া হলো:
মৌলভীবাজার জেলায় যোগদানের পর হতে জেলা পুলিশ ও থানা পুলিশের তৎপরতায় জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখাসহ অপরাধ প্রবণতা হ্রাস ও একের পর এক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় শ্রীমঙ্গল থানায় এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ভিকটিম ও খুনীর পরিচয় শনাক্তসহ মূল আসামীকে গ্রেফতার করতে সচেষ্ট হয় শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। গত ১৮/০৫/২১ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ৯.২০ ঘটিকার সময় এসআই/মুহাম্মদ আসাদুর রহমান শ্রীমঙ্গল থানাধীন ৪নং সিন্দুরখান ইউনিয়নের অন্তর্গত পশ্চিম বেলতলী সাকিনস্থ উদনার ছড়া ব্রিজের নিচে একটি সাদা রংয়ের প্লাস্টিকের বস্তার ভিতর পা বাধা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ পান। উক্ত ঘটনায় রুজৃকৃত মামলার তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির বস্তায় লিখা “মোঃ অনিক শ্রীমঙ্গল” এর সূত্র ধরে সাইফুর রহমান মার্কেটের পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী অনিক এবং তার ভাই জুয়েল মিয়াকে সনাক্ত করেন। তারা জানান যে, গত ১৮/০৫/২০২১ খ্রিঃ রাত ০৮:১৫ ঘটিকায় গ্রেফতারকৃত আসামী মসুদ মিয়া উক্ত বস্তাটি চা পাতা ভরার কথা বলে তাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। আসামী মসুদ মিয়া একজন সুদের ব্যবসায়ী। সে ৪/৫ টি বিবাহ করেছে। মসুদ মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় অজ্ঞাতনামা মৃত মহিলা তাহার ৪র্থ স্ত্রী ডলি আক্তার। গত ৭/৮ মাস পূর্বে ঝিনাইদহ সদর থানায় বধনপুর গ্রামের মৃত ফেলু মন্ডলের মেয়ে ডলি আক্তারের সাথে শ্রীমঙ্গল নতুনবাজারে পরিচয় সুবাধে বিবাহ হয়। সিন্দুরখান রোডের আসামীর বসতঘরে ডলি আক্তার এবং আসামী মসুদ মিয়া ঘর সংসার করে আসছে। বিভিন্ন মেয়েদের সাথে তার পরকিয়ার সম্পর্ক রয়েছে। তার ঘরে বিভিন্ন ধরনের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তদন্তকালে জানা যায় গত ১৭/০৫/২১খ্রিঃ আসামী মসুদ মিয়ার সহিত ডলি আক্তারের ঝগড়া বিবাদ হয়। ঐ দিন রাত অনুমান ০৩:৩০ ঘটিকায় আসামী মসুদ মিয়া তার স্ত্রী ডলি আক্তার (২৮) কে কাপড়/রশি দিয়া গলায় ফাস লাগিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। গত ১৮/০৫/২১ খ্রিঃ মসুদ মিয়া মৃত ডলি আক্তারকে বস্তাবন্দি করে। রাত প্রায় ০৮:০৫ ঘটিকায় সিন্দুরখান রোডের সিএনজি স্ট্যান্ড ম্যানেজার মনফর মিয়াকে ফোন দিয়ে একটি সিএনজি পাঠানোর কথা বলে। মনফর মিয়া সিএনজি ড্রাইভার বেলাল মিয়াকে আসামী মসুদ মিয়ার বাড়িতে পাঠান। মসুদের বাড়িতে বেলাল উপস্থিত হলে বস্তাটি গাড়িতে তুলতে বলে। বেলাল মিয়া বস্তার ভিতর কি আছে জিজ্ঞাসা করলে মসুদ মিয়া কোন উত্তর দেয় না। একপযায়ে সিএনজি গাড়িটি মসুদ মিয়ার নির্দেশে বেলাল মিয়া হুগলিয়া বাজারের দিকে যেতে থাকে। হুগলিয়া বাজারে যাওয়ার সময় বস্তাটি উদনাছড়া ব্রিজের উপর হতে নিচে ফেলে দেয়। বেলাল মিয়া আবারও বস্তার ভিতরে কি আছে জিজ্ঞাসা করলে মসুদ মিয়া জানায় বস্তার ভিতর গরুর মৃত বাছুর রয়েছে। লাশ ভর্তি বস্তাটি আসামী মসুদ মিয়াকে দেখালে তিনি জানান যে, বস্তাটি সে অনিক এবং জুয়েল এর কাছ থেকে নিয়েছিল মর্মে স্বীকার করে। কোনো স্ত্রীর সাথেই তার দাম্পত্য জীবন ভাল ছিল না। প্রাথমিকভাবে উক্ত লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে জনাব আশরাফুজ্জামান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(অতিরিক্ত পুলিশ পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), শ্রীমঙ্গল সার্কেল সহ শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের কঠোর প্রচেষ্টা ও অভিযানে উক্ত হত্যাকান্ডের সহিত জড়িত প্রধান আসামীকে ১৯/০৫/২১ খ্রিঃ রাত ০৩.০৫ ঘটিকার সময় শ্রীমঙ্গল থানাধীন রামনগর সাকিনস্থ তার নিজ বাড়ি হতে গ্রেফতার করা হয়।
০১। নিহত ভিকটিমের নাম-ঠিকানাঃ-
ডলি আক্তার (২৮), পিতা-মৃত ফেলু মন্ডল, সাং-বধনপুর, থানা ও জেলা-ঝিনাইদহ।
০২। গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম-ঠিকানাঃ-
মোঃ মসুদ মিয়া (৫২), পিতা-মৃত এখলাছ মিয়া, মাতা-জমিলা বিবি, সাং-রামনগর (জুড়াপুল), থানা-শ্রীমঙ্গল, জেলা-মৌলভীবাজার।
মৌলভীবাজার জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ জেলা পুলিশের সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
আগত সকল সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাই এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইনের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।