বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল প্রথম থেকেই। তিনি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ছিলেন। এক ভুক্তভোগী গ্রাহকের করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য মালিকরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অথচ আত্মসাতের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যদিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছিল। দেশত্যাগেও জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা। সোহেল রানা আঁচ করতে পেরেছিলেন যেকোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
তাই পালিয়ে ভারত হয়ে নেপাল যেতে চেয়েছিলেন। এখন বাংলাদেশ পুলিশ তাকে বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। একটি থানার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সোহেল রানা কীভাবে ই-কমার্সের ব্যবসা গড়লেন এবং দিব্যি তা চালিয়ে গেলেন এটি এখন বড় প্রশ্ন। তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এখন এই প্রশ্নের মুখে।
ই-অরেঞ্জের মালিকদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ১১শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। আত্মসাতের সঙ্গে যুক্ত আছেন পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানাও। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই তিনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। এই ব্যবসা ছাড়া তার আরও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। অনেকে মন্তব্য করছেন- রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করেছেন এই পুলিশ পরিদর্শক। এছাড়া প্রশ্ন উঠেছে আত্মসাৎ করা ১১শ’ কোটি টাকা কোথায় গেল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানার বিরুদ্ধে শুধু টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নয়। তার বিরুদ্ধে আরো নানা অনৈতিক কারবারের অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হোটেল ও স্পা সেন্টার খুলে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেনজেনসহ আরো বেশকিছু দেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। পর্তুগালের নাগরিকত্বও রয়েছে তার। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন সোহেল রানা আত্মসাৎ করা টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। কাগজপত্রে ই-অরেঞ্জের মালিক সোহেল রানার বোন মেহজাবিন হলেও মূলত সোহেল রানাই এই কোম্পানি পরিচালনা করতেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে তিনি এই প্রতিষ্ঠান চালাতেন। যদিও নিজের টিআইএন নম্বরে ই-অরেঞ্জের অনুমোদন ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিলেন।
এদিকে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। যেহেতু ভারতে মামলা হয়েছে এ কারণে তাকে ফিরিয়ে আনা যাবে কি না সেটি নিশ্চিত নয়। তবে ফিরিয়ে আনার রাস্তা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিএসএফকে চিঠি দিয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এটি অনেক সময় করা হয়। আমরা চেষ্টা করছি ফিরিয়ে আনার জন্য। যদি এ মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হয় তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ফেরত আনার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, সোহেল রানার ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। রিপোর্ট পেলে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে শুক্রবার কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে সোহেল রানাকে আটক করে বিএসএফ। তারপর একটি মামলায় তাকে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি।
গত ১লা সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ১৭ জন প্রতারিত গ্রাহকের পক্ষে একটি মামলা দায়ের করেন জনৈক রাসেল। এতে ১০ নম্বর আসামি করা হয় এই পুলিশ কর্মকর্তাকে। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৮ লাখ ৯৪ হাজার ৯১৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া বাদী রাসেলের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। একইসঙ্গে অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলা রুজু করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান থানাকে আদেশ দেন। যথারীতি মামলা দায়ের হয়। মামলায় বর্ণিত এজাহার থেকে জানা যায়, বাদী রাসেল আগেই আশঙ্কা করেছিলেন, সোহেল যেকোনো মুহূর্তে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন। বাদী রাসেল এটাও অভিযোগ করেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে থানা প্রথমে মামলা নেয়নি।