কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে ঝিনুকের আদলে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ৬৭ শতাংশ। আর সমুদ্র ছুঁয়ে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ের নির্মাণের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিকমানের উন্নয়নের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধি দল। স্বপ্ন নয়; সত্যি হতে যাচ্ছে, আকাশপথে কক্সবাজার বিমানবন্দরে দিবা-রাত্রি যাত্রীবাহি ফ্লাইট উঠা-নামার। আগামী মার্চ মাসে সাগরঘেঁষা কক্সবাজার বিমানবন্দরে চালু হচ্ছে দিবা-রাত্রির ফ্লাইট। পর্যটন নগরীতে অবকাঠামোর সংকটে এখন পর্যন্ত বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারে। তবে সংকট আর থাকছে না ফেব্রুয়ারি থেকে। তখন রাতেও চালু হবে রাত্রিকালিন ফ্লাইট।
সরজমিনে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের নাজিরারটেক মোহনা। গেলো কয়েকমাস আগেও সমুদ্রের এই মোহনায় জোয়ার-ভাটা হতো। কিন্তু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এই মোহনায়। যেখানে সমুদ্র ছুঁয়ে তৈরি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের নয় হাজার ফুটের দীর্ঘ রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকছে সমুদ্রের মধ্যে।
ইতিমধ্যে চারদিকে শেষ হয়েছে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ, শেষ হয়েছে বালি ভরাটও। এখন চলছে মাটি লেভেল ও ব্লক আনার কাজ। নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগে বর্ধিত এই নতুন রানওয়ের কাজ শেষ হবে বলে জানালেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে বর্ধিতকরণ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার এম মোশাররফ হোসাইন বলেন, প্রধানমন্ত্রী গেল বছরের আগস্ট মাসে সমুদ্র ছুঁয়ে নতুন রানওয়ে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সমুদ্রের মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট নতুন রানওয়ের নির্মাণ কাজ। গেলো ৫ মাসে এই প্রকল্পের ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যার মধ্যে জিও ব্যাগ ও বালি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখন মাটি লেভেলের কাজ এবং সিসিব্লক আনার কাজ চলছে। যেভাবে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে এতে আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগেই এই নতুন রানওয়ের কাজ সম্পন্ন হবে।
এদিকে একই সঙ্গে থেমে নেই ঝিনুকের আদলে নির্মিত আন্তর্জাতিকমানের টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। ইতিমধ্যে বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে এবং অন্যান্য কাজগুলো শেষ হয়েছে ৬৭ শতাংশ।
ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনালের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সব কাজ ৬৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন হবে। তবে আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে এই টার্মিনালটিকে। কারণ, ঝিনুকের আদলে তৈরি হচ্ছে এই টার্মিনাল, যেখানে কক্সবাজারের একটি ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হবে।
এদিকে শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক মানের উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে আসেন জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধি দল। তারা নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। এরপর নতুন রানওয়ে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চীনা কোম্পানীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দীর্ঘ বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলটি সরজমিনে ১ হাজার ৩০০ ফুট সমুদ্র গর্ভে নির্মিত রানওয়ের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন। পরে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। তিনি নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।
পরে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসেব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ বলেন, “হিমালয় পর্বত জয়ের মতো একটি অভিযান এই যে নতুন রানওয়ে যেটা সাগর গর্ভে প্রবেশ করছে; এর চেয়ে বড় সফলতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এই কালে পার্থক্য করলে এটা একটা বিরাট বিষয়। বঙ্গোপসাগরের ভেতরে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম একটি রানওয়ে হচ্ছে।
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ আরও বলেন, দেশের জন্য আরও একটা বড় একটা সুখবর হচ্ছে; নতুন রানওয়ের পাশে যখন চর জাগবে তখন আরেকটা নতুন রানওয়ে হবার সম্ভাবনা উজ্জল হচ্ছে এবং সেটাও আমরা কবর আশা রাখি। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীতকরণের প্রকল্পের কাজ দেখে আমরা সত্যিই অবিভূত। সরকারের যে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজেই তা প্রমাণ করে।
এসময় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, রানওয়েতে ক্যাটাগরি লাইটিং সিস্টেম ইতিমধ্যে অর্ন্তভুক্ত হয়ে গেছে। এখন শুধুমাত্র ক্যালিভেশনটা বাকি রয়েছে। যেটা বিদেশি টেকনিক্যাল পরিদর্শকরা আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে বিদেশি টেকনিক্যাল পরিদর্শকরা আসতে পারেনি। আমরা আশা করছি, শীঘ্রই বিদেশি টেকনিক্যাল পরিদর্শকরা আসবেন এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটা সম্পন্ন হবে। তারপর থেকেই দিবা-রাত্রি বিমান উড্ডয়নের জন্য রানওয়ে প্রস্তুত হয়ে যাবে। মার্চ মাস থেকেই কক্সবাজার বিমানবন্দরে দিবা-রাত্রি ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান আরও বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই আমাদেরকে নানা দিক-নির্দেশনা প্রদান করছেন প্রধানমন্ত্রী। রানওয়ে বর্ধিতকরণের যে কাজ সমুদ্র গর্ভে ১ হাজার ৭০০ ফুট বাড়িয়ে রানওয়ে করা হচ্ছে, এতে পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে যে কোন বিমান কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামতে পারবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, কক্সবাজারে এভিয়েশনের হাব হবে। তারই একটা সফল বাস্তবায়ন পক্ষে সিভিল এভিয়েশন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসেব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, কমিটির সদস্য সদস্যরা, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয়রা একযোগে সহযোগিতা করছে।
এসময় কমিটির অন্যান্য সদস্য, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজারে সহজে যাতায়াতসহ নানাবিধ সুবিধা ভোগ করবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।