অগ্রযাত্রা সংবাদ ডেস্কঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে স্লোগান কণ্ঠে নিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে ঝাঁপিয়ে পড়ত বাংলার দামাল সন্তানরা সেই ‘জয়বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দ্রুত এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ ওমিক্রন উপলক্ষ্যে চলতে থাকা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত থাকছে। বাইরে বের হলে মাস্ক পরার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে অনুরোধ করেছে সরকার। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুটি আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিসভা কক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকে ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন’ সংশোধন করার উদ্দেশ্যে ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত সুরক্ষা আইন’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (সংশোধন) আইন-২০২১’-এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জয়বাংলা’ স্লোগান প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম জানান, উচ্চ আদালত থেকে রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার ‘জয়বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান করার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপন দিয়ে জাতীয় স্লোগান হিসাবে ‘জয়বাংলা’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় বা সরকারি অনুষ্ঠানের শেষে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবিধানিক পদধারীগণ, রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ‘জয়বাংলা’ বলবেন। মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিতে হবে। স্কুল-কলেজে অ্যাসেম্বলি বা এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠানের পর সরকারি-বেসরকারি যারা থাকবেন ‘জয়বাংলা’ স্লোগান ব্যবহার করবেন। তবে ঠিক কবে ‘জয়বাংলা’র বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে তার নির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাননি তিনি।
বিধিনিষেধ থাকছে না কাল থেকে : বিধিনিষেধ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে। এর পর থেকে আপাতত বিধিনিষেধ দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, বিধিনিষেধ আর বাড়ছে না। তবে বাইরে বের হলে বা কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। সবাইকে সেটা নিশ্চিত করার অনুরোধ করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সব লেভেলের লোকদের এটা মানতে হবে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনসহ করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ১৩ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি সারা দেশে বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। এরপর বিধিনিষেধের মেয়াদ একাধিক দফায় ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। যা আজ শেষ হচ্ছে।
এক কোটি টিকা : আগামী শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সারা দেশে এক কোটি করোনার টিকা দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম জানান, কারও এনআইডি না থাকলেও টিকা দিতে পারবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, এনআইডির বদলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কাগজে তার বাড়ির ঠিকানাটা লিখে নিয়ে কেন্দে গেলে টিকা পাবেন। তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে করোনার আরেকটি ঢেউ আসার আশঙ্কা রয়েছে। সেটি ওমিক্রনের মতো দুর্বল নাও হতে পারে। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১২ বছরের নিচের বয়সিদেরও দ্রুত টিকা দেওয়ার চিন্তা করছে। এ বিষয়ে বিশ্বের অন্যসব দেশে কম বয়সিদের টিকা দেওয়ার অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত বিশ্লেষণগুলো পেলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত সুরক্ষা আইন : মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ব্যাংকে রাখা টাকা-পয়সা রাখা টাকা পয়সার এক ধরনের নিরাপত্তা আছে। কিন্তু লিজিং কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা ডিপোজিটে গ্রাহকের নিরাপত্তা নেই। সেজন্য ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন’ পরিবর্তন করে ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত সুরক্ষা আইন’ করা হচ্ছে। ব্যাংক ছাড়াও যত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, তারা সবাই এ আইনের আওতায় আসবে। ডিপোজিট নিতে হলে ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকে কিছু সিকিউরিটি মানি রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগে আইন ছিল ব্যাংক খোলার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকে সেইফটি হিসাবে ডিপোজিট থাকে। কিন্তু লিজিং কোম্পানিগুলোর ছিল না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যুবক টাইপের যেসব কোম্পানি ছিল, যারা টাকা-পয়সা লেনদেন করত। বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের কোনো সিকিউরিটি মানি ছিল না। আইনটি সংশোধন হলে যারা যে নামেই ফিনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান করবে তাদের অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকে নিবন্ধিত হতে হবে। লিজিং কোম্পানি উঠে গেলে বা প্রতারণা করলে গ্রাহকরা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ওই ডিপোজিট থেকে পাবেন। এ দুই লাখ টাকা গ্রাহকরা পাবেন সরকারের কাছ থেকে, অর্থাৎ সরকার গ্রাহকের দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঝুঁকিহ্রাসের দায়িত্ব নিচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে আরও যেভাবে টাকা পাওনা সেটাও পাবেন গ্রাহকরা।
মন্ত্রিসভায় ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (সংশোধন) আইন, ২০২১’-এর নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বর্তমানে ‘স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ’ ও ‘স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ’ শীর্ষক দুটি বিভাগে ভাগ হয়েছে। নবগঠিত বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক কিছু পদের নাম পরিবর্তনের জন্য কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। আইনটিতে নীতিগত কোনো পরিবর্তন আসছে না। অন্যদিকে দেশের বেশকিছু সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা এনজিওদের কাছে দিতে ২০০৭ সালে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তটি মন্ত্রিসভা বাতিল করেছে। এর বাইরে ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০০৭’ প্রণয়নের যে সিদ্ধান্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়েছিল সেটাও বাতিল করেছে মন্ত্রিসভা।