মৌলভীবাজার প্রতিনিিধি :: মৌলভীবাজারে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ধর্ষণের এ অভিযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনার পর সোমবার ওই তরুণী ছাত্রফ্রন্ট নেতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সোমবার দুপুরে ওই তরুণী মৌলভীবাজার মডেল থানায় ছাত্রফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব তুষারকে প্রধান আসামি এবং জেলা বাসদ নেতা আয়কর আইনজীবী রায়হান আনসারী ও নারী সুরক্ষা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মারজিয়া প্রভাকে ধর্ষকের সহযোগী উল্লখে করে মামলা করেন।
একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই তরুণীর পরিচয়, ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোস্তফা কামাল বিজয় নামে একজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন ওই তরুণী।
দুই মামলার তথ্য নিশ্চিত করেন মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি ইয়াছিনুল হক।
এ ঘটনায় মামলার আগেই সামাজিক মাধ্যমে রটে যাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ছাত্রফ্রন্ট থেকে সজিব তুষার এবং বাসদ থেকে রায়হানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া সাংবাদিক মাহমুদকে ৩০ তারিখ সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটে ৩ আগস্ট রাতে। মৌলভীবাজার শহরতলীর সোনাপুর এলাকায় সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খানের বাসায়। ওই বাসায় তখন উপস্থিত ছিলেন পাঁচজন।
মামলার বিবরণ, তরুণীর অভিযোগ ও মাহমুদ এইচ খান অভিযোগে জানা যায়, সোনাপুর এলাকায় মাহমুদ এইচ খানের বাসায় ৩ আগস্ট ডিনার পার্টির আয়োজন করেন মারজিয়া প্রভা। ডিনার পার্টিতে উপস্থিত হন ছাত্রফ্রন্টের সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক রায়হান আনসারি, ছাত্রফ্রন্টের অব্যাহতি পাওয়া জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব তুষার এবং ওই তরুণী। আড্ডার ফাঁকে তুষার সঙ্গে করে আনা গাজা বের করে সবাইকে নিয়ে খান।
ইচ্ছাকৃতভাবে ওই তরুণীকে বেশি গাঁজা খাওয়ান তুষার। পরে ওই তরুণী অসুস্থ বোধ করেন। একপর্যায়ে তুষার তাকে ধর্ষণ করেন।
তবে এ ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে সজিব তুষার বলেন, আমি ধর্ষণ করিনি।
এ বিষয়ে মামলা দায়েরের আগে মারজিয়া প্রভা ও তার বন্ধু রায়হান আনসারী এ প্রতিবেদককে জানান, সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খান যে অভিযোগ এনেছেন তা ভ্রান্ত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মাহমুদ এইচ খান তার পোস্টে আংশিকভাবে ঘটনাটি সাজিয়েছেন। সেদিন রাতে মেয়েটি যখন আসে তখন থেকেই সজিব তুষারের সঙ্গে আমরা তাকে কয়েকবার অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। মেয়েটি তখন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে দেননি। পরদিন বিকাল ৩টা পর্যন্ত মেয়েটিকে তুষারের সঙ্গে স্বাভাবিক ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। ৬ আগস্ট আলাপ করা হলে মেয়েটি বলেন, তিনি ঘটনাটি বাদ দিতে চান। এরপর স্বভাবতই আমরা আর আগাইনি।
মামলার বাদী ওই তরুণী জানান, ‘আমি প্রথমে পরিবারের মানসম্মান ও সামাজিক অবস্থান চিন্তা করে মামলা করিনি। আমার পরিবারকে জানানোর পর তারাও মামলায় সম্মতি দেয়নি। পরে যখন দেখলাম আমাকে উল্টো দোষ দেওয়া হচ্ছে এবং একটি ধর্ষণের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়ান হচ্ছে তখন আমার কাছে বেশি আঘাত লাগে। তখন পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমি মামলা করি। সত্য জানানোর জন্য মামলা দেওয়া তখন জরুরি ছিল। আশা করছি সঠিক বিচার পাব এবং আসল সত্য বের হয়ে আসবে’।
এ ঘটনায় ছবি, ভিডিও এবং নাম প্রকাশের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আসামি হওয়া বিজয় বলেন, একজন সমাজকর্মী হিসেবে মৌলভীবাজারবাসীর পক্ষ থেকে যা সত্য তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সংগঠন থেকে অব্যাহতি বিষয়ে ছাত্রফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি রেহনুমা রুবাইয়াৎ বলেন, এ ঘটনা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে জানাজানির পর তুষারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলায় প্রশাসনকে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা তাৎক্ষণিক তা করব।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি ইয়াছিনুল হক জানান, ধর্ষণ মামলায় আসামি সজিব তুষার এবং তার দুই সহযোগী রায়হান আনসারী ও মারজিয়া প্রভা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি কেবি খান বিজয়। পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে দুই মামলার তদন্ত করবে।
(সুত্র দেশ রুপান্তর)