আব্দুল বাছিত খান, হাকালুকি থেকে ফিরেঃ
দক্ষিন এশিয়ার সববৃহৎ হাওর হাকালুকির বিস্তীর্ণ স্বচ্ছ জলরাশি পর্যটকদের মুগ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে। হাওরের খোলা বাতাসে আর পড়ন্ত বিকেলের সোনালী সূর্যের আভা-নিমিষেই গড়িয়ে নামছে জলের বুকে জল-ছায়াতে জড়িয়ে হিজল-করচ, জলজও বৃক্ষের মাখামাখি মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। হাওরের মধ্য খানের নির্মিত ওয়াচ টাওয়ারকে ঘিরে ছোট-বড় ডিঙ্গি নাও হাওরের মায়াবী সৌন্দর্য্যর দৃশ্যপট- এক নজর দেখে নিতে পর্যটকরা ভিড় জমিয়েছেন- এশিয়ার বৃহত্তর হাওর হাকালুকির বুকে।
করোনার দমবন্ধ পরিবেশ মানুষের জীবনকে এক রকম দুর্বিষহ করে তুলছে। টানা ৬টি মাস ঘরবন্দী জীবন, কেমন যেন অশান্তি অস্বস্তিকর। সব কিছু ধরা ছোঁয়ার বাইরে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে গেলো ঈদুল ফিতর প্রত্যেকেই ঘর বন্দী সময় কাটিয়েছেন। কেউ কোথাও বেরুনোর সাহস পায়নি। তবে করোনার সব ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে মৌলভীবাজারে এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকির নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করছেন জিরো পয়েন্ট। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের উপস্থিতিতে মুখরিত হাকালুকি হাওর পাড়। বিশাল আকৃতির জলমগ্ন, জীব-বৈচিত্র্যে ভরপুর এই হাওর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায় তার শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত রয়েছে। এ সব উপজেলার সবকটি স্থানই হাওরের নৈসর্গিক বিশালতার সৌন্দর্যে মুগ্ধতা এনে দিয়েছে। ঘিলাছড়ায় প্রতিবছর বর্ষা ও শীত মৌসুমে শতশত পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠে।
বিস্তীর্ণ হাওরজলের মায়াবী আলিঙ্গন, নীরব জলের বুকে সূর্যের ডুব সাঁতার এসব দেখে নিতেই মূলত পর্যটকদের এখানে আসা।
শুক্রবার বিকালে দেখা, বন বিভাগের পর্যবেক্ষণ চৌকি বা ওয়াচ টাওয়ারে প্রচন্ড ভিড়। হাওরের মধ্যখানের এ চৌকিতে উপচেপড়া ভিড়। অনেকে পর্যবেক্ষণ চৌকি থেকে লাফিয়ে পড়ছেন জলে। কেউবা আবার জল ছুঁয়ে কাটছেন সাঁতার। যেসব পর্যটক এসব লাফালাফি দাপাদাপি পছন্দ নয়- তারা আবার চুপিসারে নৌকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন জলের বুকে।
সন্ধ্যার আবছায়ায় দূরপারে যখন সূর্য নামে। বর্ষাভরা হাওর বুক তখন অন্যরকম মায়াবী সাজে একটু একটু করে বদলাতে থাকে। তখন সূর্যের লাল আভায় দূরের গাছ-গাছালি, দূর গ্রাম অস্পষ্ট রেখায় চিহ্নিত হয়ে পড়ে।
হাওর পাড়ের বন কর্মকর্তা তপন চন্দ্র জানালেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সবগুলো পর্যটন স্পষ্ট এখনো বন্ধ। কোথাও মানুষের কোলাহল নেই। তবে হাকালুকির এ অংশে হাজারো পর্যটকদের উপস্থিতিতে সরগরম।
স্থানীয় ডিঙ্গী নৌকার মাঝি তাহির মিয়া জানান,পর্যটক আসায় , কর্মহীন হয়ে থাকা অনেক মাঝিদের আয় রোজগারেরও একটি পথ খুলেছে। করোনায় তাদের আয় রোজগারেও ভাটা পড়েছিলো। এখন মোটামুটি রোজগার।
কথা হয় সিলেট থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক জানার্লিস্ট গ্রুপের অন্যতম সদস্য নির্মল এস পলাস, সালাহ উদ্দীন শুভ সাথে তারা জানান, অনেক দিন সাংবাদিকরা এক সাথে ঘুরতে আসা। হাওরের রূপ দেখে তিনিসহ তার সাংবাদিক গ্রুপের সকলেই মুগ্ধ।
স্থানীয় সংবাদকর্মী মনিরুল ইসলাম জানালেন, মিঠাইন ও নকলীর চেয়েও কম নয়- হাকালুকি হাওর। পর্যটন হিসাবে এটি একটি চমৎকার স্পট। শুধু সরকারের সার্বিক সহযোগিতার প্রয়োজন।
হাকালুকির বুকে যখন সন্ধ্যা নামে। তখন হালকা অন্ধকার ভেদ করে মাঝিবাড়িদের ডিঙ্গি নৌকাগুলো, সারাদিনের ক্লান্তি মুছে একে এক পাড়ে ভিড়তে থাকে। আগামীর কর্মের প্রত্যাশা নিয়ে।