নিজস্ব প্রতিবেদক:
গিনেস বুক অব রেকর্ড অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে প্রবীণ পুরুষ মানুষের বয়স ১১১ বছর। আর বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলের মেকানীছড়ার রাম সিং গোঁড়ের বয়স ১৩৫ এর বেশি, যদিও ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী তার বয়স ১১৯ বছর। এই হিসেবে রাম সিং গোঁড়ই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ। এখন প্রয়োজন তার সব রেকর্ড গিনেস বুক রেকর্ড নথিভুক্তকারীদের কাছে পাঠানো।শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ত্রিপুরা সীমান্তের গ্রাম মেকানী ছড়া। ওই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি রাম সিং গোঁড়। রাম সিং বলেন, তার বয়স ১৩৫ বছর। ভোটার আইডি কার্ডে তার জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ৬ আগস্ট ১৯০৫। বাবার নাম বুগুরাম গোঁড়। আর মায়ের নাম কুন্তী গোঁড়। ভোটার আইডি নম্বর- ১০২৪৯১৩৩৮৪। আলাপ চারিতায় রাম সিং গোঁড় বলেন, তার পিতার আদি ভূমি ছিল ভারতে। চা চাষের জন্য তার বাবা এবং দাদা এই এলাকায় প্রথম আসেন। তার দাদা ও বাবার হাতে প্রথম পুটিয়াছড়া চা বাগান সৃজন হয়। তার হাতে সৃজন হয় হরিণছড়া চা বাগান। যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয় ১৯১৪-১৫ খ্রিষ্টাব্দে তখন তিনি বাগানের চৌকিদার। ইংরেজ সাহেবদের কাছে এই যুদ্ধের কথা শুনেন। ১৯৩৯-৪০ খ্রিষ্টাব্দে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় ইংরেজের কাছ থেকে সেই খবরও শুনেন।রাম সিং গোঁড় আরো জানান, তিনি শ্রীমঙ্গলের প্রাচীন বিদ্যাপিঠ ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। তখন ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক পাশে পাকা ঘর, লোহার পিলার ছিল, আর এক পাশে ছিল ছনের ঘর। তখন তিনি মৌলভীবাজার সড়কের কোনো এক আচার্য্য বাড়িতে থেকে পড়তেন। এ সময় শ্রীমঙ্গলে পাকা সড়ক হয়নি। তার ভাষ্যমতে পাকা ঘর বলতে শ্রীমঙ্গল পুরাতন বাজারে ত্রিপুরা রাজ্য ব্যাংক, রামরতন বানিয়ার বাসা ও জগন্নাথ জিউর আখড়ার পশ্চিমে ত্রিপুরা রাজার বাংলো (রাজ কাচারি) ছিল। মাঝেমধ্যে ত্রিপুরা রাজা হাতির পিঠে চড়ে এই বাংলোয় এসে থাকতেন এবং এখান থেকে খাজনা আদায় করতেন। তিনি জানান, চা বাগানে নিজস্ব ট্রলি দিয়ে পাতা আনা-নেয়া করা হতো। সেই ট্রলির লাইন স্থাপনও তিনি দেখেছেন।
শ্রীমঙ্গলের প্রবীণ শিক্ষক দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য্য বলেন, রাম সিং যে সব বর্ণনা দিয়েছেন তাতে নিঃসন্দেহে অনুমান করা যায়, তিনি একজন অতি প্রবীণ মানুষ। আমার বয়স ৮০ বছর। ছোট বেলায় আমি পুরানবাজারে ত্রিপুরা রাজ্য ব্যাংকের ভগ্নাংশ দেখেছি। আর শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হলেও প্রাথমিক শাখা স্থাপিত হয়েছে তারও অনেক আগে। যেহেতু ভোটার আইডি কার্ডে তার জন্ম লেখা রয়েছে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে, সে হিসেবেও তার ১১৯ বছর। গিনেস বুকে তার নাম পাঠানো উচিত। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি চা বাগান কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসতে পারেন।হরিণছড়া চা বাগানের ৮০ বছর বয়সি নিরেণ হাদিমা জানান, তিনি ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে হরিণছড়া চা বাগানের স্টাফ হিসেবে যোগ দেন। তখনই তিনি রাম সিং গোঁরকে দেখেছেন বৃদ্ধ।