অগ্রযাত্রা সংবাদ ঃ
সেই, দেড়- যুগ আগে পরিবারের সচ্ছলতার –
রঙ্গিন স্বপ্ন দু,চোখে একেঁ –
আপনজনদের জন্য ঘর বানাতে।
আপন ঘর ছেড়ে সুদূর প্রবাসে পাড়ি দিয়েছিলো।
আঠারো বছর বয়সের টগবগে তরুন যুবক।
মরুভূমির দেশে 50/ 60 ডিগ্রি তাপমাত্রায়,
অক্লান্ত পরিশ্রম করে কালো মানিকে পরিণত হয়েছে- মায়ের আচঁল ছায়ায় বেড়ে উঠা ফুটফুটে চেহারাটা।
ক্লান্ত- পরিশ্রান্ত হয়ে জীবন যুদ্ধে মাঝেমধ্যে থমকে- দাঁড়াই,
মনে হয়, আমি যেন হেরে গেলাম, আর পারছিনা! ঠিক, তখন অনুভব করি মায়ের মমতাময়ী হাত যেন- আমার মাথায় বুলিয়ে দিয়ে বলছেন!
ওঠো খোকা, তুমি এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে?
এই সংসারের দায়িত্ব গুলো কে পালন করবে?
আমি জানি তুমি পারবে,
মায়ের দোয়া তোমার সঙ্গে আছে।
মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেই, আমাকে পারতেই হবে!
বাবার চিকিৎসার টাকা, ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ, বোনের বিয়ের জন্য কিছু একটা সঞ্চয় করতে হবে।
আর মাস শেষে ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ না করে তো উপায় নেই।
এভাবেই যান্ত্রিক শহরে, প্রয়োজনের তাগিদে বছরের- পর বছর চলে যায়।
কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে, পাঁচ বছর পরে।
নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে আসা হলো, যৌবনের তাগিদে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম।
বছর ঘুরে পরিবারের নতুন সদস্য,
ছেলে সন্তানের বাবা হলাম।
খুশিতে আমি আত্মহারা, দু’বছরের মাথায় আবার- দেশে আসলাম।
কোন এক কারণে এ যাত্রায়, আমার আর প্রবাসে ফিরে আসা হলো না।
সেই থেকে শুরু হলো আমার জীবনে, নতুন এক কালো অধ্যায়।
সেই পরিস্থিতির জন্য, আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
দিন-দিন আমি বেকার হয়ে যাচ্ছি, হাতের টাকা পয়সা প্রায় শেষ।
বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনরা কেমন যেন অচেনা- মানুষের মতো আচরণ শুরু করলো,,
আমার চোখে, চোখ রেখে যারা স্বপ্ন দেখতো আজ, আমিই যেন তাদের, চোখের কাঁটায় পরিনত হয়েছি।
দিনে একবার যারা আমার সাথে, কথা না বলে থাকতে পারতো না,,
আজ তাঁরাই আমাকে দেখেও, না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলে যায়।
নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো যাদের চাহিদা মেটাতে কাটিয়ে দিলাম।
আজ, আমি তাদের কাছে শুধু মাত্র একটি, অচল পয়সার, মতো!!
আজ আমার আর বুঝতে বাকি নেই, আমি ওদের কাছে প্রিয়জন নয়,প্রয়োজনে সীমাবদ্ধ ছিলাম!!
পাথরের মতো বোবা কান্না করা ছাড়া, আর কিছুই করার ছিলো না আমার,,,,
মনের দুঃখ গুলো কাউকে বুঝাতে পারি না,,
সহধর্মিণী,র কাছেও বলতে লজ্জা বোধ হয়,,কারণ –
ও,অনেক আগেই বলেছিলো,নিজের জন্য কিছু সঞ্জয় করো,,
আমি ও,র কথায় কান দেইনি!!
নিজের জন্য আলাদা কিছু আবার কেন করব?
মা,বাবা,ভাই বোন এরাই তো আমার আপনজন।
জীবনের হিসাব মিলাতে,এখন প্রায় রাত আমার- নিশাচরের মতো কাটে।
প্রবাস থেকে নিয়ে আসা, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন আর ঔষধে সাজানো ওয়ারড্রপের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি,,
এই বুঝি আমার শেষ সম্বল!!
দিনশেষে আমি যেন, এক অসহায়,, কলুরবলদ।
দুই বছর, একমাস, সাতদিন পর,,আজ আমি আবারও দুর প্রবাসে পাড়ি দিলাম,,
তবে আগের আমি,আর আজকের আমি,তে অনেক তফাৎ,,
মনেপড়ে, প্রথম দিন সবার দোয়া নিয়ে বাড়ি থেকে- রওয়ানা দিয়েছিলাম,,
আর আজ, সমাজের বাস্তবতা,আপনজনের তিক্ত অবহেলা,সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তিত বসন্তের- কোকিলদের মুখচ্ছবি থেকে, শিক্ষা অর্জন করে –
আমি আজ, স্বার্থপর এক, নতুন প্রবাসী!!
লিখেছেনঃ সানোয়ার আহমেদ সাগর,
(কুয়েত প্রবাসী)
Leave a Reply