গোলাম কিবরিয়া পলাশ, ময়মনসিংহ থেকেঃ
দলীয় অন্তকোন্দল ও চাঁদা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে শরীফ চৌধুরী @ শান্ত (২১) কে হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ; পলাতক অপর দু’জন আসামী গ্রেফতার।
গত ০৬ এপ্রিল ২০২২ খ্রিঃ রাত অনুমান ১১.৫৫ ঘটিকার সময় কোতোয়ালী থানাধীন ২১০ মন্ডল প্লাজা চরপাড়ায় চৌধুরী ক্লিনিকের গলিতে শরীফ চৌধুরী @ শান্ত (২১) এর বুক, পেট, মুখ, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চাকু দিয়ে স্টেব (ঘাই) করা রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়। আসামীগণ শরীফ চৌধুরীকে নৃশংসভাবে চাকু দিয়ে স্টেব করে হত্যা করে চলে যায়। উক্ত ঘটনায় কোতোয়ালী থানার মামলা নম্বর-২৭, তাং-০৭/০৪/২০২২ খ্রিঃ, ধারা-১৪৩/৩৪১/৩০২/৩৪ দঃ বিঃ রুজু হয়।
অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই ময়মনসিংহ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব গৌতম কুমার বিশ্বাস এর সার্বিক সহযোগিতায় পিবিআই ময়মনসিংহ টিম উক্ত মামলাটি অধিগ্রহন করে তদন্ত শুরু করে।
শরীফ চৌধুরী @ শান্ত, পিতা-মোঃ শহীদুল আলম চৌধুরী, সাং-২১০ মন্ডল প্লাজা, চরপাড়া, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-ময়মনসিংহ’র হত্যার সংবাদ প্রাপ্তির পর পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। অতঃপর সিসিটিভি ফুটেজ নিবিড় পর্যালোচনায় উক্ত ঘটনায় জড়িত আসামীদেরকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। আসামী সনাক্তের পর পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার চৌকস তদন্ত দল পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখার সহায়তায় দ্রুততম সময়ে আসামীদের অবস্থান নির্ণয়ে সমর্থ হয়।
আসামীদের ক্ষণে ক্ষণে অবস্থান বদলসহ নিজেদের গোপন করার সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে গত গত ০৮/০৪/২০২২ তারিখ ভোর অনুমান ০৪.৩০ ঘটিকার সময় নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানা এলাকা ১। মোঃ রাকিবুল হাসান তপু (২৫), ২। মোঃ শান্ত ইসলাম (২০), ৩। মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ (২২) কে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অত্র মামলার অপর দুই জন আসামী ১। নূর মোহাম্মদ @ মোহন (২১), পিতা-মোঃ আনোয়ার; ২। মোঃ মুন্না (২৫), পিতা-মৃত আব্দুল মোতালেব, উভয় সাং-সানকিপাড়া, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-ময়মনসিংহদেরকে গত ০৯/০৪/২০২২ তারিখ ভোর অনুমান ০৫.১৫ ঘটিকার সময় নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন পাগলা রেললাইন এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, নিহত শরীফ চৌধুরী @ শান্ত এবং হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীগণ পরস্পর বন্ধু এবং এলাকায় একত্রে চলাচল করত। এছাড়াও তারা চরপাড়া এলাকার ফুটপথে অস্থায়ী দোকান হতে সাপ্তাহিক চাঁদা সংগ্রহ করত। গত ১০/১৫ দিন আগে নিহত শরীফ উক্ত বন্ধু-বান্ধব ত্যাগ করে আলাদা গ্রুপ তৈরি করে এবং চাঁদা আদায়ে নিজের আধিপত্য বজায় রাখে। চাঁদার ভাগ পেতে অন্যদেরকেও তার সাথে যোগ দিতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
ফলে আসামীগণও তার উপর প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে। বিগত কয়েক দিন তাদের মধ্যে এই ধরণের উত্তেজনা চলমান থাকাবস্থায় ঘটনার দিন ০৬/০৪/২০২২ তারিখ রাত অনুমান ১১.৫৫ ঘটিকার দিকে পূর্ব হতে ওৎ পেতে থাকা উক্ত আসামীগণ মন্ডল প্লাজা, চরপাড়া চৌধুরী ক্লিনিকের গলিতে ডিসিস্ট শরীফকে একা পেয়ে অতর্কিতে তার উপর হামলা করে এবং উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে গুরুত্বর জখম করে। তাকে স্থানীয় জনগণ দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
অত্র মামলার হত্যাকান্ড সংঘটনের পর পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা তদন্ত শুরু করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকান্ডে জড়িত মূল তিন জন আসামীকে গ্রেফতার করে এবং পরের দিন অর্থ্যাৎ গত ০৯/০৪/২০২২ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে। তন্মধ্যে আসামী মোঃ রাকিবুল হাসান তপু ও মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মতে নিজেদের জড়িয়ে সহযোগী আসামীদের নাম উল্লেখ করে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী মোহন ও মুন্না ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে স্বীকার করেছে। তাদেরকে অদ্য ১০/০৪/২০২২ তারিখে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি গ্রহণের নিমিত্তে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে।পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার সকল অফিসার ও ফোর্সের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এবং পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখার সহযোগীতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অত্র মামলার সকল আসামীদের গ্রেফতার ও মামলার আলামত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
Leave a Reply