কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে চা-শ্রমিকদের উৎসব বোনাস প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ। চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি রাজদেও কৈরী ও সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরা সোমবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, আইনানুগভাবে সকল চা-শ্রমিকদের দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৫,৫৬৯ টাকা উৎসব বোনাস প্রদান করার কথা থাকলেও অনেক বাগানেই চা-শ্রমিকদের কম বোনাস প্রদান করা হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর, দেওছড়া বাগানসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকদের কর্মদিবসে উপস্থিতির উপর নির্ভর করে কম উৎসব বোনাস প্রদান করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কর্মদিবসে উপস্থিতির উপর নির্ভর করে উৎসব বোনাস কম দেওয়া বেআইনী। হাজিরা বোনাস বা উৎসাহ বোনাস কর্মদিবসে উপস্থিতির উপর নির্ভর করে কম বেশি হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ (অদ্যাবধি সংশোধিত) এর ২(২ক) ধারা এবং বাংলাদেশ শ্রমবিধিমালা-২০১৫ এর ১১১(৫) বিধি অনুযায়ী সকল শ্রমিককে সমান হারে বছরে ২ টি উৎসব বোনাস প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমন কি ২০২৩ সালের ১০ আগষ্ট চা-শিল্প সেক্টরে নি¤œতম মজুরির গেজেটে (এসআরও নং ২৪৬-আইন/২০২৩) অনুযায়ী উৎসব বোনাস সকল শ্রমিকের হারে প্রদান করার আইন আছে। কিন্তু অনেকে বাগানে ৫,৫৬৯ টাকা স্থলে কর্মে উপস্থিতি উপর নির্ভর করে বেআইনীভাবে উৎসব বোনাস কম প্রদান করেছেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে দৈনিক মাত্র ১৭৮.৫০ টাকা মজুরিতে এমনিতেই চা-শ্রমিকদের অবস্থা ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’; তার উপর আইনানুগভাবে প্রাপ্য ন্যায্য সামান্যতম উৎসব বোনাস হতে কম বোনাস প্রদান করা শুধু বেআইনীই নয়, অমানবিকও বটে। এছাড়া আইনানুগভাবে ক্যাজুয়াল শ্রমিকরাও স্থায়ী শ্রমিকের সমান মজুরি প্রাপ্য হলেও অনেক বাগানেই ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের কম মজুরি প্রদান করা হয়।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন আগামী ৯ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে অথচ এখনো অনেক বাগানেই বোনাস প্রদান করা হয়নি। চা-শ্রমিকদের অধিকাংশই সনাতন ধর্মাম্বলী হলেও দুর্গার পূজার প্রাক্কালে এনটিটির ১২ টি, দেউন্দি টি কোম্পানীর ৪ টিসহ রাজনগর, মাথিউরা, ইমাম-বাওয়ানী, কালাগুল, ফুলতলা, তারাপুরসহ কমপক্ষে ২০/২৫টি চা-বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও রেশন ঠিক মত পরিশোধ করা হচ্ছে না। এমন কি কোন কোন বাগান বেআইনীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্গার পূজার আগে শ্রমিক বকেয়া মজুরি-রেশন পরিশোধ না করায় চা-শ্রমিকরা চরম অনিশ্চয়তায় খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। তার উপর যদি মজুরি-রেশন আটক রাখা হয়।
চা-শ্রমিক নেতারা সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও উৎপাদনে সক্রিয় থাকার প্রয়োজনে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ৬ সদস্যের পরিবারে ভরণ পোষণের খরচ হিসাব করে ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য নি¤œতম মজুরি নির্ধারণ এবং একটি পরিবারের সাপ্তাহিক প্রয়োজনের অনুপাতে চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, সাবান, চা-পাতাসহ পূর্ণ রেশন প্রদান, স্থায়ী-অস্থায়ী নির্বিশেষে সমকাজে সমমজুরি, ভূমির অধিকার প্রদান, চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটি প্রদানে বৈষম্যসহ শ্রম আইনের বৈষম্য নিরসন করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মজুরি ও উৎসব বোনাস প্রদানে সকল অনিয়ম বন্ধ করে শ্রমআইন মোতাবেক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক প্রদান, ফুলতলা চা-বাগানসহ বন্ধ সকল চা-বাগান চালু, বকেয়া মজুরিসহ নিয়মিত সকল চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ এবং ৯০ দিন কাজ করলেই সকল শ্রমিককে স্থায়ী করার জোর দাবি জানান।
Leave a Reply